১৯তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা ২০২৫ (NTRCA Exam Qualification)
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষা, যা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নির্বাচন করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় সফল হতে হলে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, ধারাবাহিক প্রস্তুতি এবং পরীক্ষার কাঠামো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা। এরই লক্ষ্যে আজকে আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি বেসরকারি শিক্ষক বিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা:
সাধারণ প্রার্থী: উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অথবা স্নাতক সম্মান বা সমমান ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। তবে আপনি যদি স্নাতক পরীক্ষা সদ্য সম্পন্ন করে থাকেন তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত প্রশংসাপত্র, মার্কসিট ও প্রবেশপত্র দিয়ে আবেদন করা যাবে। শুধুমাত্র একটি তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক এর মধ্যে একটি তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য। বিদেশি ডিগ্রি থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা: উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর ফাজিল পাশ থাকলে আবেদন করতে পারবেন।
বয়সসীমা: প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
স্কুল পর্যায় ২ / স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী / জুনিয়র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা:
সাধারণ প্রার্থী: উচ্চমাধ্যমিক পাস অথবা ডিগ্রি বা সমমানের ডিগ্রি প্রার্থীগণ আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষাজীবনের কোনো বিভাগে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারিগরি HSC ভোকেশনাল/ সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। শিক্ষাজীবনের যে কোনো পর্যায়ে একটির বেশি তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়। বিদেশি ডিগ্রি থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা: আলিম বা সমমানের ডিগ্রি থাকলে আবেদন করতে পারবেন।
কারিগরি (Technical) শিক্ষা: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল সমমানের ডিগ্রি বা প্রযুক্তিগত ডিগ্রি প্রযোজ্য।
বয়সসীমা: প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
কলেজ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা:
সাধারণ প্রার্থী: উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর স্নাতক সম্মান বা সমমানের ডিগ্রি। শিক্ষাজীবনের কোন পর্যায়ে একটির বেশি তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়। বিদেশি ডিগ্রি থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা: ফাজিল/কামিল সমমানের ডিগ্রিধারী প্রার্থীগণ আবেদন করতে পারবেন।
বয়সসীমা: প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রস্তুতি ও কৌশল:
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সফল হতে হলে সঠিক প্রস্তুতি, সময় ব্যবস্থাপনা এবং পরীক্ষার কাঠামো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। এই পরীক্ষা সাধারণত ৩টি ধাপে হয়ে থাকে:
১। MCQ প্রিলিমিনারি
২। লিখিত
৩। ভাইভা
সুতরাং প্রতিটি ধাপের জন্য আলাদা কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
আরও দেখুন: ১৯তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন (ntrca) পরীক্ষার প্রস্তুতি
শিক্ষক নিবন্ধন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মানবণ্টন:
বিষয় | নম্বর বণ্টন |
সাধারণ জ্ঞান | ২৫ |
বাংলা | ২৫ |
গণিত | ২৫ |
ইংরেজি | ২৫ |
পূর্ণমান | ১০০ |
প্রিলিতে ৪০% নম্বর পেলেই সাধারণত পাস ধরা হয়।
শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষার মানবণ্টন:
স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে প্রার্থীর একাডেমিক পর্যায়ের নিজ পঠিত বিষয়ের উপর ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। স্কুল- ২ পর্যায়ে শুধু বাংলায় ৫০ ও ইংরেজিতে ৫০ নম্বর সহ মোট ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় হয়।
শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা পরীক্ষার মানবণ্টন:
মৌখিক পরীক্ষা ২০ নম্বরের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সার্টিফিকেটে ১২ নম্বর, পোশাকে ৪ নম্বর এবং প্রশ্নোত্তরে ৪ নম্বর থাকে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য আপনার নির্দিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং সাম্প্রতিক ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে Basic জ্ঞান থাকলে সুবিধা হবে।
লিখিত অংশে বিষয়ভিত্তিক গভীর জ্ঞান ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা দেখা হয়। ভাইভা পরীক্ষায় দেখা হয়, সাধারণত ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস ও উপস্থাপন দক্ষতা। নিয়মিত পড়াশোনা, পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন অনুশীলন, নোট তৈরি এবং মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ায়। এছাড়াও মানসিক প্রস্তুতি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে নজর দেওয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ যাতে পরীক্ষার দিন মনোযোগ ও উদ্যমতা বজায় থাকে।
উপসংহার:
আশাকরি ১৯তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতা নিয়ে আমাদের লিখাটি আপনার পছন্দ হয়েছে। নিবন্ধন পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন শুধু জ্ঞানভিত্তিক প্রস্তুতির ওপর নয়, বরং সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত অনুশীলন এবং মানসিক দৃঢ়তার উপরও নির্ভর করে। প্রতিটি ধাপে মনোযোগ দিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া, পূর্ববর্তী প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করা এবং আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা এবং একজন প্রার্থীকে সাফল্যের পথে এগিয়ে দেয়। তাই লক্ষ্য স্থির রেখে ধারাবাহিক পরিশ্রমই NTRCA পরীক্ষার সফলতার মূল চাবিকাঠি।
শিক্ষক বিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসা করা কিছু প্রশ্নের উত্তর:
১। প্রশ্ন: নিবন্ধন স্কুল পর্যায়-২/ইবতেদায়ী শিক্ষক নিবন্ধন কি?
উত্তর: স্কুল পর্যায়-২/ ইবতেদায়ী শিক্ষক নিবন্ধন হলো প্রাথমিক স্তরের সমমান এবং মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ইবতেদায়ী স্তরের শিক্ষকতা করার জন্য প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষা।
২। প্রশ্ন: শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা কত বছর বয়স পর্যন্ত দেওয়া যায়?
উত্তর: সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দেওয়া যায়।
৩। প্রশ্ন: ইবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন কত?
উত্তর: ইবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন সরকারি বেতনস্কেল অনুযায়ী সাধারণত ১১তম গ্রেডে। (প্রায় ১২,৫০০ থেকে শুরু হয় ও অন্যান্য ভাতা প্রযোজ্য)
৪। প্রশ্ন: ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সময়সূচি কবে?
উত্তর: ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি এখনও প্রকাশিত হয় নি।
Comments